ইসলামাবাদ: ‘একতরফা ব্যবস্থা’ গ্রহণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে পাক সেনাবাহিনী বলেছে, আফগানিস্তান প্রশ্নে সহযোগিতার আকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও জাতীয় মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বৃহস্পতিবার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, সশস্ত্র বাহিনী বন্ধুদের সাথে কাজ করছে এবং কাজ অব্যাহত রাখতে চায়। তবে আমাদের জাতীয় সম্মানের ব্যাপারে কোনো আপস নেই। আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথে সঙ্ঘাত চাই না। তবে পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, পাকিস্তানে ‘একতরফা ব্যবস্থা’ গ্রহণের হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্সের (আইএসপিআর) প্রধান ইংরেজি ও উর্দুতে কথা বলেন। দৃশ্যত আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের কাছে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবাবেগ প্রকাশ করতেই তিনি এ উদ্যোগ নেন।

একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মার্কিন মহল থেকে ইঙ্গিত দেয়ার পর এটিই সম্ভবত পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রবল প্রতিক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলে আসছে, পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় রয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে সিআইএ পরিচালক মাইক পোম্পেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ঘাঁটি’গুলো নিশ্চিহ্ন করতে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভব সবকিছু করবে। এদিকে পোমপিওর বক্তব্যের পাশাপাশি আফগানিস্তানবিষয়ক পেন্টাগনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন এলাকায় একতরফা পদক্ষেপ’ গ্রহণ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। হুঁশিয়ারির গুরুত্ব আরো বাড়ে যখন গত সপ্তাহে আফগানিস্তান সফর করে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়েছেন। সামরিক মুখপাত্র বলেন, সম্ভাব্য একতরফা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, ঐক্যের মাধ্যমেই এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তান ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে হুমকি দিয়ে আসছে। তিনি আরো বলেন, জারব-ই-আজাব এবং রাদুল ফাসাদ অভিযান দুটিতে সব ধরনের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি আর টেকে না। আমরা নিশ্চিত, পাকিস্তানে কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্ঘবদ্ধ আশ্রয় নেই। ‘আরো কিছু করো’ মন্ত্রের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বলেন, আমরা যথেষ্ট করেছি, আর কিছু করতে পারব না। তবে তিনি বলেন, আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার ব্যাপারে পাকিস্তান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ ওই দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হলে পাকিস্তান লাভবান হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানের কিছু দাবি তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- শক্তিপ্রয়োগ বন্ধ, বিশ্বাস ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন, পাকিস্তান থেকে আফগানদের প্রত্যাবাসন, আফগানিস্তানে ভারতের ভূমিকা নিয়ন্ত্রণ, নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বন্ধে নয়া দিল্লিকে রাজি করানো। চলতি বছরই ভারত ১,৮১৩ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতির পর এবারই সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘন ঘটেছে। এসব হামলায় ৫২ জন বেসামরিক লোক হতাহত হয়েছে। পাকিস্তান এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যে দুর্বৃত্ত উপাদানই বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের দাবি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল গফুর বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো দুর্বৃত্ত উপাদান নেই। তিনি বলেন, এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা সাংবাদিকরা জেনারেল মোশাররফকে জিজ্ঞাসা করত পারেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn