সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) সাবেক ২ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ ৩ ব্যক্তিকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। জানা যায়,অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া সন্তান সাজিয়ে জালিয়াতি প্রতারনার আশ্রয়ে ভাতা পাইয়ে দিয়ে প্রাপ্ত ভাতার টাকা ভাগ ভাটোয়ারা করে নেয়ার অভিযোগে শান্তিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আতাউর রহমান মাস্টার ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রাধাকান্ত দাসসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জসীট দেয় সিআইডি পুলিশ। চার্জসীটে অভিযুক্তরা হচ্ছেন,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার বাঘেরকোনা গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান,পাথারিয়া ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের মৃত গৌরচন্দ্র দাসের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা রাধাকান্ত দাস,কাবিলাখাই গ্রামের নিত্যানন্দ পালের পুত্র অপু পাল,কাঁন্দিগাঁও গ্রামের মৃত বিধূভুষন দাসের পুত্র নান্টু কান্ত দাস ও দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের গোরেশপুর গ্রামের মৃত সাধন চন্দ্র পালের পুত্র সন্তোষ পাল এই ৫ ব্যক্তি।

মামলা সূত্রে জানা যায়,২০১৯ সালের ১৯ মার্চ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের সলফ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা গেদা আলীর পুত্র ইসলাম আলী অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা প্রদানের অভিযোগে সুনির্দিষ্টভাবে ঐ ৫ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার এসআই মোঃ আলাউদ্দিন প্রথম দফায় তদন্ত করেন। পরে মামলাটি সিআইডি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে সিআইডির এসআই সুমন মালাকার অধিকতর তদন্ত করে উক্ত ৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত ১৬ মার্চ ২০২১ইং  অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়,নান্টু কান্ত দাস ও সন্তোষ পাল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হওয়ার পরও জাল ওয়ারিশান সনদ সৃজন করে,জাল সনদকে বৈধ হিসেবে ব্যবহার করে,প্রতারক সন্তোষ পাল বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল কুমার পাল ও প্রতারক নান্টু দাস বীর মুক্তিযোদ্ধা যতীন্দ্র কুমার দাসের পুত্র সেজে কাবিলাখাই গ্রামের মৃত নিত্যানন্দ পালের পুত্র অপু পালের সহায়তায় দলিল দিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছিলো। প্রতারনার মাধ্যমে প্রতারক সন্তোষ পাল ২০১৮ইং পর্যন্ত ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা  উত্তোলন করে। একইভাবে প্রতারনার মাধ্যমে প্রতারক নান্টু দাস ২০১৮ইং পর্যন্ত  ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে।

তদন্তে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা যতীন্দ্র দাস পিতামৃত বিপিন চন্দ্র দাস একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তবে তিনি স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাস করে আসছেন। প্রতারক নান্টু দাস তার সন্তান না হওয়ার পরও জেনেশুনে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আতাউর রহমান ও ডেপুটি কমান্ডার রাধাকান্ত দাস সরকারী সম্মানী ভাতার টাকা আত্মসাতের অসদুদ্দেশ্যে জাল কাগজপত্র সৃজন করে আবেদন করিয়ে তাদের নামে ভাতা মনজুর করত: নিজেরা সরকারী ভাতার টাকা হজম করেন। কাবিলাখাই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল কুমার পাল অনেক বছর আগে পরিবার পরিজন নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেছেন। তাঁর সঠিক সন্ধান এখনও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এ সুযোগে প্রতারক অপু পাল তার স্ত্রীর ভাই সন্তোষ পাল কে বীর মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া সন্তান সাজিয়ে আতাউর রহমান ও রাধাকান্ত দাসের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধার নামীয় রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার টাকা নিজেরা ভাগ ভাটোয়ারা করে নেয়।

সিআইডি পুলিশ মাত্র ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জসীট দাখিল করলেও উক্ত পরিকল্পিত জালিয়াতি প্রতারনার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিনকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভূক্ত না করে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা আরো বলেন,সাবেক কমান্ডার আতাউর রহমান  একাধিক মামলার অন্যতম আসামী।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর সোমবার সুনামগঞ্জের আমলগ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শান্তিগঞ্জ জোনে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত প্রধান ৩ আসামীকে জামিনের আবেদন না মনজুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আলী আমজাদ ও এডভোকেট গৌরাঙ্গ পদ দাসসহ ৬ জন আইনজীবী। মামলার অন্যতম সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শফিকুর রহমান চৌধুরী,বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী,বীর মুক্তিযোদ্ধা মনির উদ্দিন,বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির,বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ আবু মিয়া সহ  সকল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা অবিলম্বে এই ঘটনার সাথে জড়িত সমাজসেবা অফিসার গিয়াস উদ্দিনসহ জড়িত সকলকে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn