এ বছরের মত সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো হাজারো প্রাণের মিলনমেলা অমর একুশে বইমেলার। সমাপ্তি উপলক্ষ্যে আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার) শেষ দিনে মেলায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। ছুটির দিন না হওয়া সত্ত্বেও শত ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে মেলা প্রাঙ্গনে ছুটে আসেন বইপ্রেমী মানুষজন। শেষ দিনের উদ্দীপনার পাশাপাশি ভালোবাসার বইমেলাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানোটাও যেন কষ্টকর ছিল মেলায় আগত দর্শনার্থীদের কাছে।

সেইসাথে এবারের একুশে বইমেলা বিক্রিতে আগের সব রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। এবার মোট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার বই। বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সব প্রকাশনার বইয়ের বিক্রির হার ছিল গতবারের তুলনায় বেশি। বাংলা একাডেমি ও অন্যান্য প্রকাশনীর কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে এই বিক্রির পরিমাণ হিসাব করা হয়েছে।

মঙ্গলবার মেলার দুই প্রাঙ্গন (বাংলা একাডেমী-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এ আগত দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, সারা বছর অনেক উ‌ৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তারা অপেক্ষা করেন অমর একুশে বইমেলার জন্য। জ্ঞান আহরণের পাথেয় বই সংগ্রহ করার পাশাপাশি বন্ধু-স্বজন আর পরিচিতজনদের সাথে মিলিত হওয়ার উপলক্ষ্য হিসেবে বইমেলাকে অনন্য বলে আখ্যায়িত করেন তারা। আর এমন মিলনমেলাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানোটাই তাই অনেকের কাছে রীতিমত কষ্টের ব্যাপার। তবে সামনের বছরে বইমেলা আরও সমৃদ্ধশালী রূপে, আরও বিপুল জনসমাগমের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশাবাদী তারা।
মেলার শেষ দিনে রাজধানীর উত্তরা নিবাসী বেসরকারী চাকরীজীবি জুবায়ের আহমেদ সপরিবারে এসেছিলেন বইমেলায়। পূর্বপশ্চিমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে প্রতিদিনই মেলায় আসা হত। পেশাগত জীবনে সুযোগের অভাবে আসা হয় না। কিন্তু বইমেলার শত শত স্মৃতি, আর লাখো প্রাণের স্পন্দনের টানে ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে শুধুমাত্র মেলার শেষদিন উপলক্ষ্যে অর্ধবেলায় অফিস ছুটি নিয়ে ছুটে এসেছি। শেষদিনে মেলায় আসা না হলে সারা বছরটাই যেন একটা অপ্রাপ্তি থেকে যেত।

বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সরব উপস্থিতি ছিল মেলার শেষ দিনে। বন্ধুদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী সৌরভ জানান,  সুযোগ পেলেই আমরা মাসজুড়ে চলা বইমেলায় ছুটে আসতাম। বই কেনার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের সাহিত্যাঙ্গনের খোঁজখবর রাখা আর বন্ধুদের সঙ্গে বিকালে বইমেলায় ঘোরাঘুরি-আড্ডার ব্যতিক্রমী আনন্দ শুধুমাত্র বইমেলাকে ঘিরেই সম্ভব। আজ শেষ দিনে কেমন যেন একটা শূণ্যতা অনুভব করছি। বইমেলার সুখস্মৃতি আর অভিজ্ঞতা আগামী এক বছর বেশ মানসিক প্রশান্তি দেবে আমাকে। সেই সাথে এ বছরের মত শেষ হওয়ার দু:খটাও কম নয় বলে জানান তিনি।

শুধু রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকা থেকেই নয়, আজ দেশের দূরবর্তী জেলাগুলোর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল মেলায়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মাহমুদ ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন, প্রাণের বইমেলার টানে গতরাতে প্রায় ৮ ঘন্টা দূরত্বের পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসেছি। দূরত্বের কারনে সবসময় আসার সুযোগ না হলেও এ বছর শেষদিনে আসতে পেরে তিনি বেশ খুশি বলে জানিয়েছেন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সমাপনী উপলক্ষ্যে সন্ধ্যায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। বইমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে বইমেলা ২০১৭ এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান। এতে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn