সিলেট থেকে : সিলেটে গ্যাং রেপের মূলহোতা আরিয়ান তালুকদার সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ক্লিপেও ঘটনার সময় তার উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর ধর্ষিতা ওই মেয়েটিও তাকে সনাক্ত করেছে। তবে আলোচিত এ ঘটনায় মুখ খুলেনি সাহেদ। পুলিশ গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার মূলহোতা হচ্ছে গ্রেপ্তারকৃত সাহেদ। গ্যাং রেপের ঘটনার পর সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ফিরে আসার পর পুলিশ তাকে শামীমাবাদ এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে অবশ্য এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আমিরুলও প্রথমে পুলিশের কাছে সাহেদকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছিল। আলোচিত এ গ্যাং রেপের ঘটনাটি ঘটেছিল সিলেটের শামীমবাদ আবাসিক এলাকায়। গত ঈদুল আজহার পরপরই একটি ফাঁকা বাসায় নিয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে চারজন মিলে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে। ঘটনার পর ওই ছাত্রী ও তার পরিবারকে ভিডিও দেখিয়ে মামলা না করারও হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ। মামলার বাদী নগরীর ঘাষিটুলার লামাপাড়ার সুমন মিয়ার বাসার ভাড়াটে বাসিন্দা সায়েরা বেগম। কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে তিনি প্রথমে দুইজনকে আসামি করেন। আসামিরা হলো, সুমন মিয়ার ভাড়াটে বাসিন্দা কামরুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমীন বেগম ও তার আত্মীয় কলাপাড়া এলাকার ইয়াসির আরাফাত।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ঈদের পরদিন গত ৩রা সেপ্টেম্বর তার বাসার পাশের বাসার পরিচিত মহিলা ইয়াসমীন বেগম দুপুরে এসে বলে- সে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া এলাকায় তার বোনের বাসায় বেড়াতে যাবে। তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে সঙ্গে নেয়ার আব্দার জানান। এই আব্দার শুনে সায়েরা বেগম অমত করেনি। তিনি স্কুল পড়ুয়া ওই মেয়েকে ইয়াসমীনের সঙ্গে সরল বিশ্বাসে পাঠিয়ে দেন। কলাপাড়ার পাকা রাস্তার মোড়ে যাওয়া মাত্র ইয়াসমীনের দেবর আরাফাত তার মেয়েকে চুইংগাম খেতে দেয়। চুইংগাম খাওয়ার পর তার মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এজাহারে সায়েরা বেগম বলেন, অজ্ঞান অবস্থায় আরাফাত ও অপর তিন সহযোগী তার মেয়েকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় তারা ভিডিও ধারণ করে রাখে এবং মেয়ের ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালায়। ধর্ষণের ঘটনার পর ওইদিন বিকালে স্কুলছাত্রীটিকে ছেড়ে দিলে সে ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী নিজাম বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ঘটনা জানায়।

খবর পেয়ে সায়েরা বেগম গিয়ে নিজাম মিয়ার বাড়ি থেকে তার মেয়েকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেন। ঘটনার পরপরই সায়েরা বেগমকে তার মেয়েকে ধর্ষণের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে হুমকি দেয়া হয়। বলা হয়, তারা বিষয়টি পুলিশকে জানালে ভিডিও ফুটেজ মোবাইলে ও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে। ঘটনার পর দুইদিন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসা শেষে ৫ই সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় এজাহার দাখিল করেন মা সায়েরা বেগম। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামলা রেকর্ড করে। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেটের লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নজরুল ইসলাম। তিনি গতকাল বলেন- ঘটনাটি শুধু ধর্ষণই নয়, অমানবিকও। নবম শ্রেণি পড়ুয়া ওই মেয়েকে অজ্ঞান করে চার নরপশু ধর্ষণ করে। ভিডিওটি তার হাতে আসার পর তিনি নিজেও অবাক হন এবং আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেন।

প্রথমে তিনি ইয়াসমীন বেগমকে গ্রেপ্তার করেন। ইয়াসমীন বেগমের কাছ থেকে পুরো ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে একে একে ভিডিও ধারণকারী মিলন ও আমিরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে আমিরুল এ ঘটনায় সিলেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। কিন্তু ঘটনার মূলহোতা সাহেদ ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সে ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায়। সম্প্রতি সে শামীমাবাদের আত্মীয়ের বাসায় ফিরে আসে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কোতোয়ালি থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে আরিয়ান তালুকদার সাহেদকে গ্রেপ্তার করেছে। এসআই নজরুল জানান, গ্রেপ্তারের পর ধর্ষিতা নিজেই এসে সাহেদকে সনাক্ত করে এবং জানায় সাহেদ তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে বেশি। এ সময় সাহেদের সহযোগী আরাফাত ভিডিও রেকর্ড করে। পরবর্তীতে ওই ফুটেজ দিয়ে হুমকি দেয়া হয় বলে পুলিশকে মেয়েটি জানায়। গতকাল দুপুরে সাহেদকে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছে। আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন। পুলিশ জানিয়েছে, সাহেদকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। ধর্ষিতার মা ও মামলার বাদী সায়েরা বেগম গতকাল জানিয়েছেন, ধর্ষক ও ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও ধারণকারী ইয়াসির আরাফাত এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। সে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এই হুমকির কারণে তার মেয়েকে তিনি স্কুলে দিতে পারছেন না। তিনি ইয়াসির আরাফাতকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn