ওয়েছ খছরু: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের ‘স্বতন্ত্র’ অবস্থান ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। ইতিমধ্যে জামায়াত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জোরেশোরে চালাচ্ছে কার্যক্রমও। বিএনপির তরফ থেকে এ ব্যাপারে এখনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে সিলেট জামায়াতের নেতারা বলছেন, ২০ দলীয় জোটের ঐক্য জাতীয় নির্বাচনে। স্থানীয় নির্বাচনে নয়। এ কারণে কেন্দ্রের নির্দেশেই তারা প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। গেল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গড়েই নির্বাচন করেছিলো বিএনপি। তখন জামায়াত প্রার্থী দেয়নি। বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে তারা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষ কারণে সিলেটের ওই স্থানীয় নির্বাচনে তারা বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছিলেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নেতারা। কিন্তু উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে জামায়াত অনেক স্থানেই আলাদা প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো। এবার সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে। এখনো বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন নিয়ে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে উঠেনি সিলেট। চলতি মাসে সিলেট সফরকালে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন মার্চে হতে পারে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তার এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলের ভেতরে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রার্থিতা নিয়ে প্রধান দুটি দল বিএনপির ভেতরে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। দুটি দল থেকে একাধিক প্রার্থী আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সহ-সভাপতি রেজাউল হাসান লোদী কয়েস, মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকি। ইতিমধ্যে সিলেট বিএনপির মেয়র প্রত্যাশী কয়েকজন নেতা ঢাকায় গিয়ে দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তবে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে বেশ এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইতিমধ্যে কেন্দ্রের কাছে ইচ্ছে পোষণ করেছেন বলে বিএনপির তরফ থেকে জানা গেছে। এরই মধ্যে এবার জামায়াত আগেভাগেই জমিয়ে তুলেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। প্রায় এক সপ্তাহ আগে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ওই মতবিনিময় সভায় আইনজীবী সমিতির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। অ্যাডভোকেট জুবায়েরের এই প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে সিলেটে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের অংশ হিসেবে বুধবার সিলেটে প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন অ্যাডভোকেট জুবায়ের। ওই মতবিনিময় সভায় অ্যাডভোকেট জুবায়ের নিজেই খোলাসা করে জানিয়েছেন ‘সিটি নির্বাচনে আমার প্রার্থিতা নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এটা যেহেতু স্থানীয় নির্বাচন তাই আমরা তা করতে দৃঢ়সংকল্প।’ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত আগেভাগেই প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নামায় নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ ২০০৩ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে ক’টি নির্বাচন হয়েছে সবক’টিতেই জামায়াত প্রার্থী দেয়ার জন্য তোড়জোড় চালিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তারা প্রার্থী দেয়নি। ওয়ান ইলেভেনের সময় তৎকালীন মহানগর আমীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানও প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে নির্বাচন বয়কটের কারণে তারা প্রার্থী দেননি। জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, গেলবার দেশের ৫টি সিটি করপোরেশনে এক সঙ্গে নির্বাচন হয়। এবং ৫টিতেই জামায়াত দলগতভাবে বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিলো। এবার জামায়াত আগেভাগেই নির্বাচনে প্রার্থী নামিয়েছে। গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে চায় জামায়াতে ইসলামী। প্রার্থিতা প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন ২০দলীয় জোট হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় নির্বাচনের জন্য নয়। এ কারণে কেন্দ্রের নির্দেশে তারা প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নেমেছেন। গেলবার সিলেটে বিশেষ কারণে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপিকে ছাড় দিয়েছিল জামায়াত। এবার একক প্রার্থী দিতে জামায়াত প্রস্তুতি শুরু করেছে। তিনি বলেন, সিলেটে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জুবায়েরের ইমেজ রয়েছে। একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়েই প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। সিলেটের সবখানে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সুতরাং জামায়াত প্রার্থী নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর অবস্থানও স্পষ্ট। তিনি বলেন, জামায়াত তো আলাদা একটি দল। তারা প্রার্থী ঘোষণা করতেই পারে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন জোটবদ্ধ হবে কিনা- সেটি সময়ই বলে দেবে। যা দলীয় সিদ্ধান্তে হবে। এদিকে প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ‘ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সম্প্রীতি বিনষ্টে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারপরও আমাদের মাঝে সামাজিক বন্ধন দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় সুদৃঢ় রয়েছে। একটি নগরীকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে একা কোনো ব্যক্তি বা দলের পক্ষে সম্ভব নয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাই সম্ভব হবে।’ বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার ফোরাম সিলেট মহানগর-এর উদ্যোগে আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ফোরামের আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান কবির রিপনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান জাকারিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. ফখরুল ইসলাম। ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমানের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মতবিনিময় সভায় শতাধিক প্রকৌশলী অংশ নেন। সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা সোহেল আহমদ, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুর রব, বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেট-এর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আলিম উদ্দীন, বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, বাংলাদেশ ভোকেশনাল শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার হাসানুজ্জামান চৌধুরী সোহেল, আইডিইবি সিলেট জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল কিবরিয়া, ইঞ্জিনিয়ার লায়েক আহমদ প্রমুখ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn