সুনামগঞ্জ :: সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এবছর এক ফসলী বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মনে স্বস্তি ফিরেছে। টানা ঝড়,বজ্রপাত বৈরি আবহাওয়ায় কিছুটা ক্ষতি হলেও তেমন কোনো উদ্বেগ নেই কৃষকদের মনে। এদিকে ১লা মে থেকে সরকারি ভাবে ধান সংগ্রহ করার ঘোষণা দেয়া হলেও এখনো পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে না। কিন্তু চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে তাও আবার মিল মালিকদের কাছ থেকে। ফলে মহাজনী ঋন,পরিবারের চাহিদা,শ্রমিকের মুজুরী দিতে কম মূল্যে বোরো ধান বিক্রি করে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন লাখ লাখ কৃষক। জানাযায়,সরকারী ঘোষণার অনুযায়ী ১মে ধান সংগ্রহ শুরু করার কথা থাকলেও ২০দিন পেরিয়ে যাবার পর গত শুক্রবার বিকালে অনুষ্টানিক ভাবে চাল সংগ্রহের কার্যক্রম উদ্ভোধন করা হয়। ৬হাজার মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হবে সারা জেলায়। কিন্তু হাওরাঞ্চলে এখনো শুরু হয় নি ধান ক্রয়। তবে বর্গাচাষীর পরিমান তুলনা মুলক ভাবে বেশি থাকায় কৃষকরা ধান কাটার পর পরই ধান বিক্রয় করতে চেষ্ঠা করেন পরিবার ও নিজের প্রয়োজনে। ফলে কৃষকরা সঠিক মূল্য না পাওয়ায় হতাশায় মধ্যে বাধ্য হয়েই কম দামে এক প্রকার বাধ্য হয়ে ৫৫০টাকা হতে ৭শত টাকা ধরে ধান বিক্রয় করতে হচ্ছে সুবিধা ভোগী ফরিয়া ব্যবসায়ীদের কাছে। সঠিক সময়ে ধান সংগ্রহের কাজ শুরু হলে কৃষকরা সরকার নির্ধারীত ১০৪০টাকা ধরে মনপ্রতি ধান বিক্রি করতে পারত। অন্যদিকে সরকারী খাদ্য গোদামে ধান দিতে গেলে দালাল,সরকারী দলের নেতা ও গোদাম কর্মকর্তার সহযোগীদের কাছে ধর্ননা দিতে হয় অভিযোগ রয়েছে। গত দু বছরে ক্ষতির শিকার কৃষকরা এবার বোরো ধানের ফলন ভাল হওয়ায় সেই ক্ষতি পুশিয়ে নিতে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকেই দ্রুত যেন ধান ক্রয় করা হয় জেলার দাবী সর্ব মহলে।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার কৃষক পিযুস পুরকাস্ত টিটু,সাদেক আলী,শফিক,শিবেন্দ্র দাসসহ জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের কৃষকগন বলেন,প্রতি বছরেই সরকারী ধান সংগ্রহের সময় পার হয়ে যায় কোন খোজঁ নাই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। ফলে প্রান্তিক কৃষকদের বিক্রয় যোগ্য ধান কৌশলে কিনে নিয়ে শুভংকরের ফাঁিক দেয় গোদাম কর্মকর্তার যোগ সাজোসে জেলার বিভিন্ন বাজারের প্রভাবশালী ফরিয়া ব্যবসায়ী চক্র। কৃষক আবুল কালাম বলেন,দারদেনা করে জমি করছিলাম। এখন পাওনাদারদের তাগিদে কম টাকায় ধান বিক্রি করেছি। সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার সুযোগ থাকলেও আমরা পাবনা। ধান সংগ্রহের কাজ যদি আরো আগে থেকে শুরু হত তাহলে ৭শ টাকা ধরে আমাদের ধান বিক্রি করা হত না। সরকারের কাছে বিক্রি করা হলে আমরা ১হাজার ৪০টাকা মন বিক্রি করতে পারতাম। এখন প্রতিমণে ৩শ ৪০টাকা লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করা হচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন,স্থানীয় বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের উৎপাদনের খরচ হিসাব মিলছে না। চলতি বছর ব্যাংক,এনজিও,মহাজনি ঋন নিয়ে কেউ কেউ আবার দার দেনা করে বোরো ফসল রোপন করেছিল কৃষক। সময মত সরকারী ধান সংগ্রহের কার্যক্রম চালু না করায় কৃষকগন ক্ষতির শিকার হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার সাহা জানান,এই সময়ে খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহ শুরু হলে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বাড়বে। এ বছর বোরো মৌসুমে জেলায় ২লাখ ২২হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এতে ১২লাখ ৩৫হাজার ৬৩৫মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকা। এ ধান থেকে ৮লোখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ জাকারিয়া মোস্তফা বলেন,ধান সংগ্রহের চিঠি পেয়েছি। ধান সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। এ বছর সুনামগঞ্জ থেকে মোট ৬হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একজন কৃষক থেকে সর্বোচ্চ তিন মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। প্রতি মণ ধানের দাম পড়বে ১০৪০টাকা। প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলায় কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্য মনিটরিং টিম থাকবে। এক ব্যাক্তি যেন একাধিকবার ধান দিতে না পারেন সেই জন্য এই টিম কাজ করবেন। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট বলেন,গত বছর ফসল হারিয়ে এবছর হাওড়ে বোরোর বাম্পার ফলনের পরও লাভের মুখ দেখছে না কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতে সাংসারিক প্রয়োজন ও দেনার দায় শোধ করতে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn