সারাদেশের ন্যায় বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে সুনামগঞ্জে ৩ দিনব্যাপী ‘উন্নয়ন মেলা ২০১৮’ শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য এ মেলার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মেলার উদ্বোধন করেন। এর আগে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। বিশাল শোভাযাত্রাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে একযোগে উন্নয়ন মেলা ২০১৮-এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (সিলেট বিভাগ) মো. মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার, সহকারি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল মোমেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কামরুজজামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাবেরা আক্তার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান, জেলা পরিষদের পরিষদের নির্বাহী ভারপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা এমরান হোসেন, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া, জেলা রেডক্রিসেন্ট-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. পীর মতিউর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য ফৌজি আরা বেগম শাম্মীসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ সদস্য, স্কাউট, রেডক্রিসেন্টের সদস্যবৃন্দ। উন্নয়ন মেলা উদ্বোধন শেষে আয়োজন করা হয় রিয়েলিটি শো ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা। তাছাড়া দুপুরে ছিল বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়ন সংক্রান্ত উপস্থাপনা।
ওইদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান তাঁর বক্তব্যে বলেন, উন্নয়ন মেলা হল সরকার নিজে কি কি করছে জনগণের জন্য তার একটা স্থিরচিত্র। একারণে জনগণের সাথে আমাদের যোগাযোগ আরো দৃঢ় হবে। আমাদের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্দেশ্যই হলো জনগণের মধ্যে থাকা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পুঁজি হল সেই সকল মানুষ যারা নিজে পরিশ্রম করে খায়, যাদের আত্মসম্মান আছে। আমাদের নেত্রী আমাদের সবসময় বলেন আমাদের হৃদয় আমাদের মেধা আমাদের মন সবকিছু গ্রামে। বাংলাদেশ হলো একটা বিশাল গ্রাম। তাই আমাদের সকল কাজে গ্রামের যারা নারী-পুরুষ তাদেরকে আমরা অগ্রাধিকার দিব। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বিশেষ করে ৯ বছরে আপনারা সাক্ষী আপনারা দেখেন দেশে কী পরিবর্তন হয়েছে এবং গ্রামাঞ্চলে কী পরিবর্তন হয়েছে। একটা উদাহর যদি দেই তার থেকে আর বড় কোনো উদাহরণ হবে না তা হলো বিদ্যুৎ। আজকে হাজার হাজার গ্রাম আলোকিত হচ্ছে। আজকে আসার সময় আমি দুইটি গ্রামে বিদ্যুতায়ন করে আসছি। প্রতিদিনই আমরা নতুন নতুন গ্রামে বিদ্যুতায়ন করছি। সরকারের লক্ষ্য হলো ২০১৯ সালের মধ্যে সারাদেশে প্রতিটি গ্রামকে বিদ্যুতের আওয়তায় নিয়ে আসা। আমার নিজের লক্ষ্য হল আগামী ২ মাসের মধ্যে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুরে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কামরুজজামান-এর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ, সহকারি পুলিশ সুপার মো. হাবিবুল্লাহ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার সাহা, পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভূইয়া প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন আমি সাঁকোবিহীন বাংলাদেশ চাই। কোনো সাঁকো থাকতে পারবে না বাংলাদেশে। ইনশাল্লাহ আমরা সাঁকোবিহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। আমরা দারিদ্র্য দূর করব। সবচেয়ে বড় কথা দারিদ্র্য নয় মানুষের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও মানুষের সম্মান তুলে ধরতে চাই। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ যে অন্যান্য দেশের মানুষের মতো সমান মর্যাদাশীল সেটা আমরা প্রমাণ করতে চাই। প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি আরো বলেন, আপনারা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাজকে বিচার করবেন। খোলা মনে, নিরপেক্ষ মনে স্বীকৃত মানুষ হিসেবে, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে, নারী হিসেবে, পুরুষ হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে, কর্মচারী হিসেবে। আপনারা যদি মনে করেন তিনি দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছেন হরতাল ঘেরাও এই নাশকতামূলক কাজকে তিনি বিতাড়িত করেছেন। আপনারা যদি বিশ্বাস করেন তিনি গ্রামে-গঞ্জে ক্লিনিক স্থাপন করে আমাদের মা-বোনদের জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছেন। আপনারা যদি বিশ্বাস করেন ভয়াবহ বন্যার পর আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের হাওর এলাকায় আমাদের স্বল্প পরিসরে চাল সরবরাহ করেছেন, তিনি বীজ দিয়েছেন, সার দিয়েছেন, অনেককে নগদ টাকা করে দিয়েছেন। আপনাদের চোখের সামনে দেখে বিচার করে দেখেন তার হক আপনাদের কাছে ভোট চাওয়ার। আপনাদের দায়িত্ব আছে তার পাশে দাঁড়াবার। আলোচনা সভা শেষে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, ৩দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলায় ৭৫টি স্টল করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn