কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে রাতের বেলায় এনজিও এবং ধর্মীয় নেতাদের কর্মকাণ্ড বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে নির্দেশনা জারি করতে অনুরোধ করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। গত ২৩শে জানুয়ারি  বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) জন্য চলমান ত্রাণ কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্যের প্রতিবেদনে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে এনজিও জঙ্গি তৎপরতা ও মিয়ানমার বিরোধী সংগঠনকে উৎসাহিত করার কাজে লিপ্ত সন্দেহভাজন এনজিও বা সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে নজরদারি বাড়ানোসহ কার্যক্রম সীমিত করা প্রয়োজন। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও কার্যক্রমে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৬টি প্রস্তাব করা হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয় প্রার্থী মিয়ানমার নাগরিকরা কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন প্রায় তিন হাজার একর নির্ধারিত জমিতে ২০টি ব্লকে ভাগ হয়ে দেড় লাখ শেডের মধ্যে বসবাস করছে। ২০টি ব্লকের জন্য পাঁচটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা প্রয়োজন। এজন্য দুই মাস আগে জরিপ করা হয়েছে। তাই দ্রুত এসব পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের পর্যাপ্ত সরকারি যানবাহন নেই। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঠিকভাবে ডিউটি করতে ডাবল কেবিন পিকআপ, সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ, মোটরসাইকেল জরুরিভিত্তিতে সরবরাহ করা প্রয়োজন। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পটিকে একটি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য জঙ্গি তৎপরতা, নাশকতামূলক কার্যক্রম রোধ তথা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পের চারদিকে সীমানা প্রাচীর বা কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, প্রবেশ ও বহির্গমন পথ নির্ধারণ এবং দুই পথে চেকপোস্ট বসানো, ক্যাম্পের চারদিকে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ এবং এসব স্থানে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে একটি নিরাপত্তা বলয় গঠন করা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য অফিস ও স্থাপনা নির্মাণ করতে প্রতিবেদনে প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, টেকনাফ এবং উখিয়া উপজেলার মিয়ানমার নাগরিক অধ্যুষিত এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং ও পর্যালোচনা করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে উপজেলা পর্যায়ে একটি বিশেষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। প্রতিবেদনে ক্যাম্পের ভেতরে যাতায়াত ব্যবস্থা দ্রুত উন্নত করা, মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদারের কথাও বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও আনসারের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ, শাপলাপুর এলাকা এবং সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বালুখালী ক্যাম্পে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn