পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ১৫ মার্চের মধ্যে অবশ্যই হাওররক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে। হাওরের কৃষকরা যাতে আর এমন দুর্যোগের মুখে না পড়ে সেজন্য নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন অবহেলা ও অর্থ সমস্যায় যেন হাওরের ফসলের ক্ষতি না হয়। তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের নির্দেশনার দিকে না চেয়ে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। এজন্যই আপনাদের হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজে পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী সতর্কতার সঙ্গে বাঁধে কাজ করার আহ্বান জানান। বাঁধের কাজে যাতে কোন ত্রুটি না থাকে সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকার নির্দেশনা দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে ‘বন্যা পরবর্তী হাওররক্ষা বাঁধ মেরামত ও সংরক্ষণ বিষয়ে আলোচনা সভায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এসব কথা বলেন। হাওরের ফসলরক্ষা বাধ বিষয়ে মন্ত্রী পিআইসির উদ্দেশ্যে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা দিকে চেয়ে না থেকে বা নীতিমালার দোহাই দিয়ে বসে থাকা যাবেনা। পিআইসিকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। কোনভাবেই ফসলকে ঝুঁকির মুখে রাখা যাবেনা। তিনি বলেন, কাবিটা প্রকল্পে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে শ্রমিক পাওয়া না গেলে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটতে হবে। বাঁধ রক্ষার কাজে স্থানীয় মানুষদের আরো সচেতন ও সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পানি আসলেও চলাচলের জন্য কোনক্রমেই বাঁধ কাটা যাবেনা। এবছর নতুন নীতিমালায় আমরা যে কাজ বাস্তবায়ন করছি আগামীতে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে সেই অভিজ্ঞতা আরো ভালো কাজ দেবে।
তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ত্রুটি আছে। আমি যখন ৩২ বছর আগে এই মন্ত্রণালয়ে ছিলাম তখন ১৯ হাজার লোক ছিল। এখন মাত্র সাড়ে ৯ হাজার। বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে আমাদের লোক কমাতে হয়েছে। এই লোকবল কমের কারণে কাজ যথাযথভাবে তদারকি করা যায় না। তিনি সুনামগঞ্জে বোরো মওসুমে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ সুষ্ঠুভাবে মনিটরিংয়ের জন্য প্রতিটি উপজেলায় আরো দুইজন করে লোক নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বা মন্ত্রণালয়ের দিকে চেয়ে না থাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ডিসিদের অবগত করে জরুরি কাজ করে যাওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। আন্তঃউপজেলা বা আন্তঃজেলার মধ্যে হাওরক্ষা বাঁধের প্রকল্প হলে স্থানীয়ভাবেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেন পানিসম্পদমন্ত্রী।
আলোচনসভায় উপস্থিত সুধীজন হাওরের ফসলরক্ষায় হাওরাঞ্চলের নদ-নদী খাল ও বিল খননের দাবি জানান। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, হাওরাঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তা না হলে উত্তরপূর্ব ভারত থেকে বালু এসে নদীগুলো আবার ভরাট হয়ে যাবে। তাই প্রতি দুই বছর পর পর ড্রেজিং করতে হবে। হাওরের সব নদীগুলোকে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, এখানে স্থায়ীভাবে ড্রেজার রেখে প্রতি দুই বছর পর নদী খনন করা হবে। তাহলেই হাওরবাসী উপকার পাবে। এই প্রক্রিয়ায় ড্রেজিং হলে ফসল নিরাপদ হবে এবং হাওরাঞ্চল বন্যাঝুঁকিমুক্ত থাকবে বলে জানান মন্ত্রী।
পানিসম্পদ মন্ত্রী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতির বিষয়ে সাধারণ মানুষের কথা বলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আজ নতুন নীতিমালায় ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এখন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছন পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকবলের কারণে তারা সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমাদের এই টেকনিক্যাল বিষয় না বুঝেই অনেকে কথা বলেন। আজ তাদের কথা থেকেই বুঝা যায় পাউবো’র সংকট ও সমস্যার কথা। তিনি বলেন, যারা গেলবার ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর বলেছিলেন ফসলরক্ষা বাঁধ ৮ ফুট করার কথা, তারা একদিকে চিন্তা করেই এই কথা বলেন। তিনি বলেন, আজ হাওরের পানি নামছেনা। এটা নতুন সংকট। যদি বাঁধ উঁচু করা হতো তাহলে আগামী দুই মাসেও পানি নামবেনা। তাই আমাকে সবদিক ভেবেই কাজ করতে হয়।
হাওর নিয়ে সুধীজন, পরিবেশকর্মী, সংবাদকর্মীসহ বিশিষ্টজনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হাওরের জীবন-জীবিকা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে নানা সংকট ও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। হাওরের জন্য এ বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদী চিন্তার মাধ্যমে আমাদের হাওরের জীবন সম্পদ ও ফসল নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তা করতে হবে।
আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, বিশ্বনাথ বালাগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য এহিয়া চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুজজামান, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুম বিল্লাহ, ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুন খন্দকার, দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এছাড়াও উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, সদস্য সচিব বিন্দু তালুকদার, সাংবাদিক শামস শামীম, সাংবাদিক মাসুম হেলাল, সাংবাদিক এমরানুল হক চৌধুরী, সাংবাদিক সেলিম আহমেদ, জাতীয় পার্টি নেতা সাহাব উদ্দিন, আব্দুর রশিদ, মনির উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদ মিয়া, জসিম উদ্দিন, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা প্রমুখ। আলোচনা সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী, সিলেটের প্রকৌশলী ও হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালকও উপস্থিত ছিলেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn