প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরেরও সরকারী করণের তালিকাভূক্ত হয়নি শিক্ষামন্ত্রীর নিজ এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা অনুসরণ করে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েও আওয়ামীলীগের ৩ দফা সরকার ও বিএনপি’র ২ দফা সরকারের আমলেও বিদ্যালয়টি সরকারী করণে আলোর মুখ দেখেনি। অবশ্য ১৯৯৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের তৎকালীন সরকারের এমপি ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও ২০০২ইং সনে বিএনপি সরকারের আমলে দলীয় সংসদ সদস্য ডঃ সৈয়দ মকবুল হোসেন বিদ্যালয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরণ করে তা সরকারী করণের জন্য সুপারিশ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, দুই সরকারের আমলেই দলীয় কোন্দলের জের ও উপর মহলে তদবীরের অভাবে বিদ্যালয়টি সরকারী করন হয়নি। তাই এই বিদ্যালয়ের শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সরকারী অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি শিক্ষকরাও বিদ্যালয়টি সরকারী করণ না হওয়ায় অনেকটা বিনা বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছেন। ফলে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের পরিবার মানবেতর জীবন যাপণ করছেন। অভিভাবকসহ সকল মহল থেকে বিদ্যালয়টির সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচণা করে তা সরকারী করণের দাবী জানিয়েছেন। এদিকে গত শনিবার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের হলরুমে দেখা করে বিদ্যালয়ের সকল কাগজপত্র দেখিয়ে তা সরকারী করণের দাবী জানান। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি পরে দেখবেন বলে কমিটির নেতাদের আশ্বাস প্রদান করেন।

জানাযায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের বাগবাড়ী বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ জানুয়ারি ১৯৯২ সনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর বিদ্যালয়টি ব্যক্তি নামে পরিচালিত হলেও ২০০০ইং সনে তা পরিবর্তন করে বাগবাড়ি বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচালিত হচ্ছে। পরিচালনা কমিটির নেতারা জানান, বিদ্যালয়ের আশপাশের ২ কিলোমিটারের মধ্যে কোন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় ওই বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষার্থীদের একমাত্র পাঠদানের অবলম্বন। তাই এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে ভর্তি হয়ে লেখা পড়া করে আসছেন। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতা করে তুলনামুলক ভালো রেজাল্ট করে আসছেন।

সম্প্রতি সেটেলমেন্ট জরিপে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শিক্ষা বিভাগের নামে ৩৫ শতাংশ জমি নামজারী করা হয়। ১৯৯৮ সনের ১৫ ফেব্রুয়ারী সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য বিয়ানীবাজারের কৃতি সন্তান নুরুল ইসলাম নাহিদ বিদ্যালয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে লিখেন, বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গ্রামবাসীর নিজস্ব উদ্যোগে ও চেষ্টায় প্রতিষ্টিত হয়েছে। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও পর্যন্ত রেজিষ্ট্রেশনকরণ হয়নি। জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি রেজিস্ট্রেশন ও সরকারীকরণ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।

২০০২ইং সনের ৯ অক্টোবর বিএনপি সরকারের আমলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য ডঃ সৈয়দ মকবুল হোসেন এক পত্রে উল্লেখ করেন, শিশুদের সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনের লক্ষ্যে এভং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের স্বার্থে বিদ্যালয়টি রেজিষ্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেন। পত্রটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রেরণ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়টি রেজিষ্টেশনভূক্ত করার জন্য ইতোপূর্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে বারবার প্রতিবেদন চাওয়া হলেও বিয়ানীবাজার শিক্ষা অফিস থেকে অজ্ঞাত কারণে প্রতিবেদন না দিয়ে সময় ক্ষেপণ করা হয়েছে। এলাকার প্রবীণ মুরুব্বী শামুসুল হক আক্ষেপ করে বলেন, আমরা ১৯৯২ সালে এলাকার ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য বিদ্যালয়টি প্রতিষ্টা করি। প্রতিষ্টার পর থেকে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি এটিকে সরকারীকরণ করার জন্য। অনেকের কাছে গিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয় নি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী বদরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই বিদ্যালয়টি এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের একমাত্র প্রতিষ্টান। তিনি অনতিবিলম্বে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিদ্যালয়টিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারীকরণের জন্য দাবী জানান।

বিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমদ বলেন, আমি এখানে যোগদান করার পর বিদ্যালয়ের যাবতীয় কাগজপত্র দেখেছি। সকল নীতিমালা মেনেই বিদ্যালয়টি পরিচালনা হচ্ছে কিন্তু এরপরও কেন সরকারীকরণ হচ্ছে না, তা বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মাসুম মিয়া জানান, কোন বিদ্যালয় সরকারী হওয়ার জন্য সরকারী কিছু নীতিমালা আছে। ওই বিদ্যালয়টি সরকারী নীতিমালার মধ্যে না পড়ায় এটিকে সরকারীকরণ করা যাচ্ছে না।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn