ভারতের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল- উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশটির প্রধান দুই দলের আমন্ত্রণ পেয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। সম্প্রতি অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করে। এছাড়া ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে আসছে ২১ এপ্রিল থেকে পাঁচদিনের সফরে ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারত যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে গত ১৭ ও ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত ৮৪তম ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্ল্যানারি সেশনে যোগ দেন তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন দলটির সদস্যরা। ওই প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। ভারতের ক্ষমতাসীন পার্টি বিজেপির আমন্ত্রণে এপ্রিলের ২১ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের ভারত সফরের কথা রয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সফরে বিজেপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, দেশটির প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের ভারত সফর প্রমাণ করে দেশটির সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা। সম্প্রতি প্রতিনিধি দলের ভারত সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে- দলটির পক্ষ থেকে এমন দাবিও করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে যে, আসন্ন সফরটিও ফলপ্রসূ হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের আমন্ত্রণে ভারত সফরের বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক- আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমনটি বলা হচ্ছে। দলটির বেশ কয়েকজন নেতার দাবি, বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজনীতির বাহক ন্যাশনাল কংগ্রেস। সে সুবাদে ন্যাশনাল কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মিত্রতা বরাবরই ছিল।

দলটির নেতারা জানান, পলিটিক্যাল পার্টি টু পলিটিক্যাল পার্টি সম্পর্ক সংক্রান্ত একটি প্রোগ্রাম রয়েছে আওয়ামী লীগের। এর অংশ হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। সে সুবাদে রাশিয়া, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রণে দেশগুলোতে সফর করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। একইভাবে দেশগুলোর রাজনৈতিক দলের নেতারাও বাংলাদেশ সফর করেন। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর দলটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যতা আগের চেয়ে গাঢ় হয়েছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যে শুধু কংগ্রেসমুখী নয় বরং সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, সেটাই দৃশ্যমান। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, “আমরা সব সময়ই শুধু ভারতের নয়, পৃথিবীর সব দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখি। যেটাকে আমরা বলি ‘পলিটিক্যাল পার্টি টু পলিটিক্যাল পার্টি’ সম্পর্ক।” তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখতে চাই। বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে। সবার সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়, অভিজ্ঞতাও বিনিময় হয়।’

কংগ্রেসের আমন্ত্রণে ভারত সফর করা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশের ঐতিহ্যবাহী, পুরনো ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। ভারতের কংগ্রেসও ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল। কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। ঐতিহাসিক কারণে আমাদের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মিল রয়েছে, রয়েছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পর্কও।’ তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি বিনিময় প্রোগ্রাম আছে। এ কারণে চীন, ভারত, রাশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমরা সফর করি। ওইসব দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারাও বাংলাদেশে আসেন।’ ‘বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া অত্যন্ত চমৎকার। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও সুসংহত হয়।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn