০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ: সংস্কারের আড়ালে মৌলবাদী রাষ্ট্র গঠনের অপচেষ্টা

রিপোর্টার
  • সময় : ১০:০৭:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৬৪ ভিউ

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-কে দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা হিসেবে প্রচার করা হলেও, এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য, পদ্ধতি এবং প্রভাব নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। এই সনদকে অনেকেই ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাকে ব্যবহার করে কট্টর ইসলামপন্থীদের মৌলবাদী, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি সর্বাত্মক চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। এই প্রক্রিয়া কেবল সাংবিধানিক বৈধতার দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ নয়, বরং এটি নারীর অধিকার খর্ব করা এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে—এমন আশঙ্কাও জোরালো হচ্ছে।

ড. ইউনূসের আড়ালে কট্টরপন্থীদের উত্থান: জুলাই অভ্যুত্থান প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হলেও, অল্প সময়েই এর নিয়ন্ত্রণ একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বলয়ের হাতে চলে যায়। এই পটভূমিতে ড. ইউনূসের মতো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ব্যক্তিত্বের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আগমন আন্তর্জাতিক মহলে একটি ইতিবাচক বার্তা দিলেও, বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর এই ‘গ্রহণযোগ্যতা’কে মূলত ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের কট্টর ইসলামপন্থী ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তিকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

​রাজনৈতিক সমীকরণে কট্টরপন্থীদের প্রাধান্য: জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থাকলেও, এর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলগুলো। দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে এই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর একক জনসমর্থন বা ভোটব্যাংক নগণ্য হলেও, তারা অভ্যুত্থান-পরবর্তী ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।

​ঐকমত্যের নামে একচেটিয়া সিদ্ধান্ত: সনদকে ‘জাতীয় ঐকমত্যের দলিল’ বলা হলেও, এতে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি (আওয়ামী লীগ) এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল দলগুলোকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি মূলত জনসমর্থনহীন ২৫টিরও বেশি দল নিয়ে গঠিত এমন একটি জোটের অঙ্গীকার, যারা আদর্শগতভাবে মৌলবাদী রাষ্ট্র গঠনে আগ্রহী। এই প্রক্রিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।

নারীর অধিকার খর্বের নীলনকশা: জুলাই সনদের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিকগুলির মধ্যে অন্যতম হলো এতে নারীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারকে অর্থপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত না করা। নারীর অর্থপূর্ণ প্রতিনিধিত্বের অনুপস্থিতি: নারী অধিকার সংগঠন ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’ স্পষ্ট অভিযোগ তুলেছে যে সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় দেশের জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি। নারীর অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বা সংসদে নারীদের জন্য সরাসরি নির্বাচনের কোনো বাস্তব কাঠামো সনদে অনুপস্থিত। সময়ক্ষেপণের কৌশল: বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বদলে সনদে কেবল ২০৪৩ সাল পর্যন্ত সময়ক্ষেপণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এটিকে নারীর নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক সমতার দাবির প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা নারীর ক্ষমতাকে খর্ব করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।

​ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রশ্ন:সনদের পটভূমি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কট্টরপন্থী রাজনৈতিক শক্তির আদর্শিক অবস্থান দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, তা এই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

​ধর্মীয় বিভাজনের আশঙ্কা: যদিও সনদে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এর বাস্তবায়নকারী শক্তি হিসেবে পরিচিত কট্টর ইসলামপন্থীদের অতীতের কর্মকাণ্ড এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৌলবাদী রাষ্ট্রের দিকে যাত্রার এই প্রক্রিয়ায় সংখ্যালঘুরা নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হতে পারেন।

সাংবিধানিক অবৈধতা: গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি: জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে সম্পূর্ণ অবৈধ। সংবিধানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন: বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, এবং সংবিধান সংশোধন বা প্রতিস্থাপনের সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্যের এই দলিলকে সংবিধানের ওপর স্থান দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা বা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এটিকে কার্যকর করার পদক্ষেপ সরাসরি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো এবং জনগণের সার্বভৌমত্বের নীতির পরিপন্থী।

স্বাক্ষরকারীদের নৈতিক দায়: যেহেতু এই সনদ সাংবিধানিক বা সংসদীয় আইনের মাধ্যমে প্রণীত নয়, তাই এর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এটি শুধুমাত্র স্বাক্ষরকারী দলগুলোর নৈতিক দায়বদ্ধতা তৈরি করে, যার ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো নির্বাচিত সরকার বা প্রভাবশালী গোষ্ঠী এটিকে সহজেই অগ্রাহ্য করতে পারে।

উপসংহার:​’জুলাই সনদ ২০২৫’ আপাতদৃষ্টিতে সংস্কারের দলিল মনে হলেও, এটি মূলত ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কট্টর ইসলামপন্থী ও মৌলবাদী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রতিষ্ঠার একটি কৌশল। নারীর অধিকার খর্ব করা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের বীজ বপন করার এই প্রক্রিয়ায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি অনুপস্থিত। ফলস্বরূপ, এই দলিল কেবল সাংবিধানিকভাবে অবৈধ নয়, বরং এটি দেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি, যা বাংলাদেশকে মৌলবাদী ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট!

এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

জুলাই সনদ: সংস্কারের আড়ালে মৌলবাদী রাষ্ট্র গঠনের অপচেষ্টা

সময় : ১০:০৭:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-কে দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা হিসেবে প্রচার করা হলেও, এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য, পদ্ধতি এবং প্রভাব নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। এই সনদকে অনেকেই ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাকে ব্যবহার করে কট্টর ইসলামপন্থীদের মৌলবাদী, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি সর্বাত্মক চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। এই প্রক্রিয়া কেবল সাংবিধানিক বৈধতার দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ নয়, বরং এটি নারীর অধিকার খর্ব করা এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে—এমন আশঙ্কাও জোরালো হচ্ছে।

ড. ইউনূসের আড়ালে কট্টরপন্থীদের উত্থান: জুলাই অভ্যুত্থান প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হলেও, অল্প সময়েই এর নিয়ন্ত্রণ একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বলয়ের হাতে চলে যায়। এই পটভূমিতে ড. ইউনূসের মতো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ব্যক্তিত্বের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আগমন আন্তর্জাতিক মহলে একটি ইতিবাচক বার্তা দিলেও, বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর এই ‘গ্রহণযোগ্যতা’কে মূলত ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের কট্টর ইসলামপন্থী ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তিকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

​রাজনৈতিক সমীকরণে কট্টরপন্থীদের প্রাধান্য: জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থাকলেও, এর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলগুলো। দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে এই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর একক জনসমর্থন বা ভোটব্যাংক নগণ্য হলেও, তারা অভ্যুত্থান-পরবর্তী ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।

​ঐকমত্যের নামে একচেটিয়া সিদ্ধান্ত: সনদকে ‘জাতীয় ঐকমত্যের দলিল’ বলা হলেও, এতে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি (আওয়ামী লীগ) এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল দলগুলোকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি মূলত জনসমর্থনহীন ২৫টিরও বেশি দল নিয়ে গঠিত এমন একটি জোটের অঙ্গীকার, যারা আদর্শগতভাবে মৌলবাদী রাষ্ট্র গঠনে আগ্রহী। এই প্রক্রিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।

নারীর অধিকার খর্বের নীলনকশা: জুলাই সনদের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিকগুলির মধ্যে অন্যতম হলো এতে নারীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারকে অর্থপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত না করা। নারীর অর্থপূর্ণ প্রতিনিধিত্বের অনুপস্থিতি: নারী অধিকার সংগঠন ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’ স্পষ্ট অভিযোগ তুলেছে যে সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় দেশের জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি। নারীর অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বা সংসদে নারীদের জন্য সরাসরি নির্বাচনের কোনো বাস্তব কাঠামো সনদে অনুপস্থিত। সময়ক্ষেপণের কৌশল: বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বদলে সনদে কেবল ২০৪৩ সাল পর্যন্ত সময়ক্ষেপণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এটিকে নারীর নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক সমতার দাবির প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা নারীর ক্ষমতাকে খর্ব করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।

​ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রশ্ন:সনদের পটভূমি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কট্টরপন্থী রাজনৈতিক শক্তির আদর্শিক অবস্থান দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, তা এই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

​ধর্মীয় বিভাজনের আশঙ্কা: যদিও সনদে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এর বাস্তবায়নকারী শক্তি হিসেবে পরিচিত কট্টর ইসলামপন্থীদের অতীতের কর্মকাণ্ড এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৌলবাদী রাষ্ট্রের দিকে যাত্রার এই প্রক্রিয়ায় সংখ্যালঘুরা নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হতে পারেন।

সাংবিধানিক অবৈধতা: গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি: জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে সম্পূর্ণ অবৈধ। সংবিধানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন: বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, এবং সংবিধান সংশোধন বা প্রতিস্থাপনের সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্যের এই দলিলকে সংবিধানের ওপর স্থান দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা বা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এটিকে কার্যকর করার পদক্ষেপ সরাসরি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো এবং জনগণের সার্বভৌমত্বের নীতির পরিপন্থী।

স্বাক্ষরকারীদের নৈতিক দায়: যেহেতু এই সনদ সাংবিধানিক বা সংসদীয় আইনের মাধ্যমে প্রণীত নয়, তাই এর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এটি শুধুমাত্র স্বাক্ষরকারী দলগুলোর নৈতিক দায়বদ্ধতা তৈরি করে, যার ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো নির্বাচিত সরকার বা প্রভাবশালী গোষ্ঠী এটিকে সহজেই অগ্রাহ্য করতে পারে।

উপসংহার:​’জুলাই সনদ ২০২৫’ আপাতদৃষ্টিতে সংস্কারের দলিল মনে হলেও, এটি মূলত ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কট্টর ইসলামপন্থী ও মৌলবাদী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রতিষ্ঠার একটি কৌশল। নারীর অধিকার খর্ব করা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের বীজ বপন করার এই প্রক্রিয়ায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি অনুপস্থিত। ফলস্বরূপ, এই দলিল কেবল সাংবিধানিকভাবে অবৈধ নয়, বরং এটি দেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি, যা বাংলাদেশকে মৌলবাদী ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট!